“জনগণ কি লকডাউন মানেনি? 

জনগণ কি লকডাউন মানে না? আপনার দেখার ভুল থাকতে পারে, আমাদের নেই। আমরা জানি জনগণ লকডাউন মেনেছে। আমরা জানি, আমরা দেখেছি, জনগণ কতটা সচেতন। আপনারা জানেন না কারণ জনগণকে দেখার চোখ আপনাদের নেই। আপনাদের চোখ শুধু আমাদের দিকে। আমাদের মন্দ খুঁজে বেড়ান। আপনাদের চোখ থাকলে দেখতেন লকডাউনে রাস্তাঘাট, বাজার, শপিংমল বন্ধ ছিল, মানুষ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে লকডাউন শেষ হবার। ওরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপনারা নন। নিজেদের অন্ধত্ব আপনারা অন্যদের উপর চাপাতে চান। এটাই আপনাদের স্বভাব; এটাই আপনাদের অভ্যাস। এসব বাদ দিন। লাইনে আসুন। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুন, দিনের আলো কত সুন্দর। ঘড়ির দিকে তাকান, দেখুন সময় কত সুন্দর। বাগানে আসুন, দেখুন ডালিম ধরে আছে। ফুলের কাছে যান, হাত দিয়ে স্পর্শ করুন, দেখুন কত আনন্দ। ফেন্সি ঝোপের আড়াল থেকে উঁকিঝুঁকি মারুন, নিজের মাঝে শৈশবিক আনন্দ আসবে। সুন্দর পোশাক পরে হাসি মুখে থাকুন, আপনাদের অসুখ কেটে যাবে। আপনারা তো অসুস্থ। অহেতুক উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। কখনো ভেবেছেন, তাতে কার কী হয়? তাতে কারো কিছু হয় না। আপনাদের পাশে কেউ আছে শোনার? আপনাদের উত্তেজনা দেখার? কেউ নাই। কারণ, আপনারা আর মানুষের সাথে নাই। আপনারা কোয়ারেন্টিনে চলে গেছেন। আপনারা কেবল নিজেদেরটাই বোঝেন। মানুষের জন্য কিছু করার থাকলে কোয়ারেনটিনে গিয়ে বসে থাকতেন না আর সেখান থেকে, থেকে থেকে অহেতুক কথা বলতেন না।….”
গুলিস্তান জিপিওর সামনে কোট, ব্লেজারের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসায় ফিরব, গাড়ি পাচ্ছি না। রাস্তায় প্রচন্ড ভীড়। একটাও খালি বাস দেখতে পাচ্ছি না যে টুক করে উঠে পড়বো। এরমাঝে এক লোক, এই গরমের মাঝেও কোট পড়ে আপন মনে এসব বলে চলেছে। আমি আমার মতো ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আড়চোখে তাকে দেখছি, তার কথা শুনছি। এ পাগল কাকে কী বলছে? যে যার মতো চলে যাচ্ছে, কাজ করে যাচ্ছে। রোদও উঠেছে চড়া। ভ্যাপসা গরম। এরমাঝে কে থামবে? আহা, পাগল হলে বুঝি এমনই হয়, কেউ শোনে না, তবুও বলে যায়।
আমার মায়া হলো। আমি ভাবলাম বাস পেতে পেতে লোকটার সাথে দু একটা কথা বলি। ‘ভাই, কার উদ্দেশ্যে এসব কথা বলছেন?’
‘ওদের উদ্দেশ্যে!’ আঙুল তুলে ব্যস্ত রাস্তার দিকে দেখিয়ে বেশ চড়া গলায় বললেন। রাস্তায় যে যার মতো আছে।
‘জনগন লকডাউন মানছে বলছিলেন….’
‘অবশ্যই মানছে! না মানলে এখন রাস্তায় এত জ্যাম ক্যান! লকডাউনে কি জ্যাম ছিল? এত গাড়ি ছিল? লকডাউনে কি গাড়ি আমদানি হইছে? সব ঘরে ছিল। সব অপেক্ষায় ছিল। ভদ্র জনগন। আইন মানছে। এখন রাস্তায় এত ভীড়, এত কাজ, এত প্রয়োজন! এসব তখন ছিল না? তখনও ছিল। আমার ভদ্রলোক জনগণ। অথচ ওরা বলে…’আমি ভাবলাম, লোকটার কথা ঠিকই আছে। আমার মনে পড়ল, একবার থার্টি-ফাস্টের সন্ধ্যায় আমি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়েছিলাম অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে। গিয়ে দেখি হাসপাতাল ফাঁকা। অন্য সময় রোগিতে গিজিগিজ করা হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। ভাবলাম আজ আবার কী হলো! হরতাল বা অবরোধ তো নেই, তাহলে হাসপাতাল ফাঁকা কেন? পরক্ষণে মনে পড়ল, ও আজ তো থার্টি-ফাস্টের রাত। শৌখিন রোগীরা আজ নিউ ইয়ার উদযাপন করবে।