ভাষাগত বোধ-বুদ্ধি একেকজনের একেকরকম; একই শব্দ ও কথার ভিন্নার্থ ধরা দিতে পারে একেকজনের কাছে। প্রচলিত কথায় আছে, “একদেশের গালি, আরেক দেশের বুলি।” কোনো কোনো এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় মহিলাকে অবজ্ঞার্থে ডাকা হয় মাগি। “হেই মাগি আম্নেরে বুলায়”- এই নির্দোষ বাক্যটি জায়গা মতো বলে দেখেন জনতার প্রতিক্রিয়া কী হয়।
এদিকে পুরান ঢাকায় দেদারসে বলতে শুনেছি মাতারি; “মাতারি কামে আহে নাই।”
মাগি বা মাতারি- এই শব্দগুলো অনেক স্থানেই আপত্তিকর শব্দ বলে বিবেচিত। আদতে, ব্যক্তি মানুষের শিক্ষা, পরিবেশ-প্রতিবেশ মিলে শব্দার্থের এই তারতম্য তৈরি হয়। এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই পরিগণিত, আর আমি স্বাভাবিক ব্যাপার নিয়েই কথা বলি।
আমরা যারা ক্ষুদ্রপ্রাণ, আমাদের মাঝে জাহিরি ঘরানার ব্যাপারস্যাপার আছে। শুধু আছে বললে কমই বলা হয়, বলতে হবে রন্ধ্রে রন্ধ্র মিশে আছে। জাহিরি ঘরানা আমরা শব্দ ও বাক্য প্রয়োগেও প্রকাশ করতে উদগ্রীব থাকি। উদাহরণ দিচ্ছি-
আমার খুব প্রিয় একজন স্যার গতকাল জানালেন, শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ির সামনে লনে বসে ছিলেন, তখন লক্ষ করলেন এক তরুণী এসে বাড়ির কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলছে। তরুণীর চোখে মুখে উদ্বেগ। স্যার লক্ষ করলেন, তরুণীর সে উদ্বেগ কেয়ারটেকারের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে, সে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না। স্যার এগিয়ে গেলেন, মেয়েটির সাথে কথা বললেন এবং কথা বলে জানলেন মেয়েটি পাশের বাড়িতে নতুন ভাড়া এসেছে এবং তার পোষা বিড়ালটা হারিয়ে গেছে। স্যার জানতে চাইলেন বিড়ালটি কী খায়। মেয়েটি জানালো দুধ। স্যার বললেন, বাটিতে করে দুধ বাসার সামনে খোলা রেখে দিন, ক্ষুধা লাগলে বিড়ালটি চলে আসবে। স্যারের পরামর্শ নিয়ে মেয়েটি চলে গেল।
রাত আটটা, সাড়ে আটটার দিকে স্যার ব্যালকনিতে গেলেন। নিচে তাকিয়ে দেখেন মহল্লার কয়েকজন তরুণ যুবক টর্চ মেরে মেরে কিছু একটা খুঁজছে। স্যার  ব্যালকনিতে থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কী করো? যুবক বয়সী পরিচিত এক ছেলে বাকের ভাই স্টাইলে ইংরেজিতে বললো, উই সার্চিং স্যার।
কী সার্চিং?
পুশি সার্চিং স্যার। দ্যাট বিল্ডিং ইয়াং গার্ল পুশি  লস্ট!
অন্তর্জালের বাংলাদেশি ফেসবুক জগতে এখন একটা ট্রেন্ড চলছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা ট্রেন্ড। যে যেভাবে পারে জানিয়ে দিচ্ছে কবে কখন কীভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছিল। এ নিয়ে আড্ডায় কথা উঠতেই গ্রামের ছেলে আক্কাস বলল, আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেকছি। সবাই ওর দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকাতে সে বলল, ঈমানে দুছ! আমি দেখছি! কাঞ্চনইন্না আর আমি একলগে মারদাসাত ফোড়তাম না? আমরা ত হুস্টেলো একলগেওই তাক্তাম। একদিন রাইতে হের লোংগিডা উইট্টা গেছিন গা। আমি হেই সমো’ কাঞ্চইন্নার জঙ্ঘা দেইক্কালছিলাম।
একই শব্দের ভিন্নার্থক গ্রহণ ও বিশ্লেষণ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে চলতেই থাকে। আমরাও এর স্বাদ গ্রহণ করি স্থান-কাল-পাত্র ভেদ মাথায় রেখে।