যেভাবে বীর, যেভাবে আমনতদার

রাস্তায় যানবাহনের গতি থেকে থেকে থেমে যাচ্ছে। জম্বি হবার প্রক্রিয়ায় থাকা প্রাণীরা রিকশা নিয়ে, হেঁটে, মোটরগাড়ি নিয়ে উদাসীন ভঙ্গিতে সামনে চলে আসছে, বিকারহীনভাবে রাস্তা পার হচ্ছে। জম্বি হবার প্রাথমিক প্রক্রিয়া হলো অনুভূতি অসাড় হয়ে যাওয়া, আমাদের এলাকার ভাষায় বললে, ‘চেদভেদ নাই’ হয়ে যাওয়া। এদের মাঝে সেই নাই হয়ে যাওয়াটা প্রবল।

যাহোক, জ্যাম সাহিত্যে আসি। আজ জ্যাম সাহিত্যে একটা সরল কাহিনির অবতারণা করছি। মূল কাহিনিটা প্রচলিত, আমার তৈরি না, কেবল লেখ্যরূপটা আর আশেপাশের সংযোজনাটা আমার। কাহিনিটা মহাবীর আলেক্সান্ডারকে নিয়ে। আলেকজান্ডার অলমোস্ট বিশ্বজয় করেছিলেন। অলমোস্ট, কেননা তিনি ভারতবর্ষে এসে নিজের শৌর্যবীর্য’র প্রমাণ রাখতে পারেননি। আলেকজান্ডারের সাথে থাকত তার ‘আমানতদার’ হিসেবে তার বিশ্বাসভাজন উজীর, যাকে তিনি উজীর শ্রেষ্ঠ ডাকতেন। ভারতবর্ষে এসে আলেকজান্ডার শৌর্যবীর্য’র প্রমাণ দিতে না পারলেও তার উজীর শ্রেষ্ঠ পেরেছিলেন।
এই উজীর শ্রেষ্ঠ’র ছিল একটা বিশেষ দিকের প্রতি ঝোঁক। আলেকজান্ডার যখন রাতে তাঁবু খাঁটিয়ে বিশ্রামে, উজীর শ্রেষ্ঠ তখন তার বিশেষ ঝোঁকটা পূরণে বেরিয়ে ছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। শৌর্য না হলেও শৌর্য’র সাথে অঙ্গাঙ্গী অংশ অপর বস্তুটি তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষে রেখে গিয়েছিলেন। আমাদের অনেক আমানতদারদের দেখে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
এবার মূল গল্পে যাই।
এক-পাঁচ-দশ-শত মেরে ফেললে খুনি, হাজারে লাখে মারলে বীর- মানুষের সভ্যতায়, সাধারণের মনে গেঁথে দেয়া এই বিশ্বাসের আলোকে দিগ্বিজয়ী বীর আলেকজান্ডার তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে বের হলেন সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। বের হবার আগে প্রধান উজিরকে ডেকে বললেন, “উজির শ্রেষ্ঠ, আমি জানি আমার আমানতের সর্বোচ্চ সুরক্ষাই আপনার জীবনের ব্রত। আপনি আছেন বলে আমি নিশ্চিন্তে দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে পড়তে পারি। এবারও যখন বেরুচ্ছি, আপনার হাতেই সব সঁপে দিয়ে যাচ্ছি। এটা নিন।
-এটা কী, মহাবীর?
-এটা একটা চাবি। আমার প্রিয় রাণীকে একটা বেল্ট পড়ানো আছে। কী বেল্ট- সেটা বুঝে নিন। কান-মুখ লাল করার দরকার নেই। মন দিয়ে শুনুন, এই অভিযান বড় কঠিন অভিযান। আপনাকে তাই রেখে যাচ্ছি রাজ্য’র কল্যাণে। আমি যদি এই অভিযানে মারা যাই, তাহলে আপনি রাণীকে আজাদ করে দেবেন।
-জ্বী মহাবীর! জ্বী হুজুর!
আলেকজান্ডার বেরিয়ে পড়লেন দিগ্বিজয়ে। সারাদিন চলে সন্ধ্যায় তাবু ফেললেন এক বিরান প্রান্তরে। রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে শুয়েছেন, তন্দ্রার মত এসেছে তার, এমন সময় উজীর শ্রেষ্ঠ হন্তদন্ত হয়ে তার তাবুতে ঢুকলেন। উজীর শ্রেষ্ঠকে দেখে আলেকজান্ডার ধড়মড় করে উঠে বসলেন, তেজি কন্ঠে বললেন, আমার ভয়ে যেখানে সবাই রাজ্য ছেড়ে পালায়, সেখানে আমার রাজ্য আক্রমণ করেছে কোন্ দুর্বৃত্ত!
উজীর শ্রেষ্ঠ মিনমিন করে বললেন, জ্বি মহাবীর, কেউ রাজ্য আক্রমণ করেনি।
-তাহলে! এভাবে হন্তদন্ত হয়ে আপনার ছুটে আসার কারণ কী!
-জ্বি হুজুর, মানে, গোস্তাখি মাফ, আপনি যে চাবিটা দিয়েছেন, সেটা তো ভুল চাবি, মহাবীর!