রাস্তা, ব্যর্থ সার্জন ও পরিকল্পনা

সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষাদান চলছে। ক্লাশে শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। বড় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রায়শই প্রশ্ন আসে ‘এ বিষয়ে আলোচনা করুন’; সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষক তাই তাঁর শিক্ষার্থীদের ‘বড় পর্যায়ের পরীক্ষা’র জন্য প্রস্তুত করতে এই আলোচনা পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। উদ্যোগ না নিলেও তেমন কিছু হতো না, এবং তাতে কারো কিছু আসতো না, যেতোও না।
শিক্ষক মহোদয় বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, আর শিক্ষার্থীরা উত্তর দিচ্ছে। শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করছিনা। নামটা এখনো বড় হয়ে ওঠেনি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে কথা তুলে শিক্ষক প্রশ্ন করলেন,’আচ্ছা বলতো যারা সার্জন হতে চায়, কিন্তু পারেনা, তারা কি করে?’
যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঝে সার্জন প্রসঙ্গ! সৃজনশীল!  সৃজনশীল! একজন উত্তর করলো, ‘স্যার তারা অন্য পেশায় গিয়ে সার্জারি চালায়।’
-কি রকম?
-স্যার, এই ধরেন যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে, সার্জন হতে না পারা লোকগুলো সারা বছর রাস্তার ওপর অপারেশন চালায়। একবার যদু চালায়, তো একবার কদু চালায়, একবার গেদু চালায়, তো একবার লেদু চালায়। ব্যর্থ সার্জনদের এই অপারেশন চলতে থাকে। এদের মনে কষ্ট, ঠিক সময়ে ঠিক চর্চার অভাবে তারা ঠিক লক্ষ্যে পৌছুতে পারেনি। তাই তারা এখন এই চর্চা অব্যাহত রাখে সারাবছর। অপারেশনের ফাঁকে ফাঁকে বসে মধু খায়।
-সৃজনশীল উত্তরটা ভালো হয়েছে। এখন এমন দু’ একজন ব্যর্থ সার্জনের নাম বল।
– স্যার নাম বলা যাবে না। বললে আমার বাসার সামনের রাস্তা কেটে ফেলে রেখে যাবে। স্যরি স্যার।
-আচ্ছা, কে বলতে পারবি, রাস্তায় বড় বড় পাইপ কেন ফেলে রাখে?
– স্যার, আমার এলাকায় এখন আছে। তিনবছর আগে মেইনরোডের মাঝখানে কেটে বিশাল আকারের সুয়েরেজ পাইপ বসাইছে। এবার সাইড কাটছে, আগের পাইপের চে’ ছোট পাইপ বসাবে। পাইপ ফেলে রাখছে অনেকদিন হইছে।
– কিন্ত কেন ফেলে রাখছে বলতো!
– হারানো স্মৃতি জাগাতে, অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
– ব্যাখ্যা কর।
– স্যার, আগে পাইপের ভেতর ছিন্নমূল মানুষ থাকতো দেখেছেন? পাইপের বস্তি ছিল?
-হুম, দেখছি তো!
– দেখবেনই তো, স্যার। আপনাদের আমলের ঘটনা! এখন তো আর পাইপের বস্তি দেখা যায় না। তাই বলে যারা সেসময় ছিল, মানে পাইপেই ছিল, এমন না, তো, তাদের এই স্মৃতির প্রতি মায়া পড়ে আছে, তাই এভাবে পাইপ ফেলে রেখে সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
আলোচনা চলছে। এরমধ্যে শিক্ষকের চোখে পড়ল এক উদাসীন শিক্ষার্থীর দিকে। সে শিক্ষার্থী চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে থাকে কিছুক্ষণ, এরপর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে, এরপর আবার ঝিম মেরে থাকে কিছুক্ষণ, এরপর আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে…. শিক্ষক ঐ শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করলেন, বললেন, ‘সেই তখন থেকে দেখছি তুই ক্লাশে মনোযোগী না। ঝিম মেরে পড়ে আছিস, আর ভাব ধরছিস খুব ধ্যান করছিস! কি হয়েছে তোর?’
-কিছু হয়নি স্যার। আমি ভাবছি, পরিকল্পনা করছি।
-কি ভাবছিস? কিসের পরিকল্পনা?
-স্যার এসব এভাবে আর হতে দেয়া যায় না। একটা সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, নিয়ে সব সার্জনদের কাজ একসাথে এক অপারেশনে শেষ করতে হবে। আমি এটা পরিকল্পনা করছি।
-কতক্ষণ ধরে এই পরিকল্পনা করছিস?
-স্যার সে-ই শুরু থেকে…..