লকডাউনে সিনে সাংবাদিক জীয়ন (পেন নেম, আসল নাম জয়েন উদ্দিন) গেল এফডিসিতে সংবাদ প্রতিবেদনের উপাদান সংগ্রহে। এফডিসি ছান মেরে সে দেখলো, পুরো এফডিসিতে নায়ক নায়িকা কেউ নাই, কিছু কাক পক্ষী আছে আর কিছু লোক ইতস্ততভাবে ঘোরাফেরা করছে। ইতস্ততভাবে ঘোরাফেরা করা লোকদের মাঝে একজনকে তার পরিচিত লাগল। সে বুঝলো লোকটা জুনিয়র আর্টিস্ট, আর বুঝলো আজ একে দিয়েই কাজ চালাতে হবে। নায়ক নায়িকা নাই, সংবাদ তৈরি করতেই হবে, এরকম অবস্থায় জুনিয়র আর্টিস্টই সই। জীয়ন ওদের দিকে এগিয়ে গেল এবং পরিচিতের হাসি মুখে ঝুলিয়ে পরিচিত মনে হওয়া লোকটিকেই জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনার মতো একজন ব্যস্ত আর্টিস্টকে এভাবে পেয়ে যাবো ভাবিনি। কেমন আছেন?’
ব্যস্ত আর্টিস্ট বলাটা একটা কৌশল, মন ভেজানোর কৌশল। অন্য সময় হলে এরাই সাংবাদিকের পিছে ঘুরতো, এখন হিসাব ভিন্ন। জীয়নের কথায় জুনিয়র আর্টিস্টের মন ভিজে গেল, বলল, ‘আর ভাই থাকা! যা মারার, এই কোভিডেই মাইরা দিচ্ছে।’ লোকটির মাইরা দিচ্ছে কথাতেই জীয়নের মাথায় এলো, আরে এ-তো মাম্বো-জাম্বো ফাইটিং গ্রুপের সদস্য! ভিলেনের আশেপাশে থাকে, কদাচিৎ একটা আধটা সংলাপ বলার সুযোগ পায়, সিনেমার প্রথমার্ধে নায়ক মার খাওয়ার সময় দলবেঁধে হাহা করে হাসে, মাঝে মাঝে মূল ভিলেন নায়ককে মারার সময় নায়কের দুই হাত চেপে ধরে রাখে, বন্দি নায়িকা যখন বেঁচে থাকার শর্তে, নায়ককে বা আর কাউকে না মারার শর্তে নেচে গেয়ে ভিলেনের আবদার পূরণ করে, তখন ওরা উল্টাপাল্টা বোতল হাতে হৈহৈ তালে নাচে। আজ ওদের কী দশা!
-যেকোনো একশন সিনেমায় আপনি তো অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা, এখন অবধি কতগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন?
-চারশো বত্রিশটা।
-বাহ! এটা তো একটা রেকর্ড! এত সিনেমায় অভিনয়!
-হুম। আরো রেকর্ড আছে। আমাদের ওস্তাদই ঢিসুম শব্দটা প্রথম সিনেমায় লাগাইছে। আমরাই প্রথম আর্টিস্টিক মারামারি শুরু করি।
-আর্টিস্টিক মারামারি? ওটা কেমন?
-দেখেন, আমাদের আগে সব হাতাহাতি টাইপ মারামারি হইতো। আমরা একশনে ডাইমেনশন আনছি। আমাদের গ্রুপে সব ধরণের একশন স্টান্ট করার মতো ফাইটার আছে।
-কী ধরণের? কী ধরণের?
-এই যেমন, নায়ক লাথি ঘুসি যা-ই দিক, মার খেয়ে শুন্যে লাফিয়ে উঠে পড়ে যাওয়া, দোতলা তিনতলা থেকে চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে পড়ে যাওয়া, ডিগবাজী খেয়ে টেবিলের উপর চিৎ হয়ে পড়া, দেওয়ালের গ্লাস ভেঙে ওপাশে পড়ে যাওয়া… মানে যা যা দরকার! আর আমাদের কোনো কম্পিউটার লাগে না। আমরা নিজেরাই এসব করি।
-এসব করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয় না?
-তা তো হয়ই। আমরা এটাকে কিছু মনে করি না। এটা আমাদের গর্ব যে কোনো কোনো সিনেমায় আমরা আহত হইছি।
-এত রিস্ক নিয়ে কাজ করছেন, আপনাদেরকে কি উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয়?
-আমরা টিম হিসাবে একসাথে কাজ করি। আমাদের পারিশ্রমিক পুরো টিমকে দেয়, আমরা ভাগ করে নেই।
-খুব ভালো। মিলেমিশে আছেন। তা পারিশ্রমিক নিয়ে কোন বচসা হয় না তো?
-বচসা মানে? বসের চাওয়া পাওয়া? বসই তো সব।
-ভাগ বাটোয়ারা কি বস করেন?
-বস না, ওস্তাদ। ওস্তাদ করেন। আমরা তার অনুগত।
-কীভাবে ভাগ করেন? মানে কাকে কী দেবেন- সেটা ঠিক করেন কীভাবে?
-ধরেন আমরা যারা পুরাতন, তারা একটা সুবিধা পাই। আমরা একটু বেশি পাই। বাকিটা পারফর্মেন্স।
-কী রকম?
-যেমন ধরেন কোন সিনেমায় আমি বেশি ফুটেজ পাইছি, তাইলে আমার পারিশ্রমিক বেশি।
-আর যারা গ্লাস ভেঙে পড়ে, বা দোতলা তিনতলা থেকে ঘুরতে ঘুরতে পড়ে যায়, তাদের? ওদের তো রিস্ক বেশি।
– ওদেরটা ফিক্স করা। তবে মাঝে মাঝে বাড়ে কমে। রিস্ক বুঝে।
-কী রকম?
– যেমন ধরেন, কোন সিনেমায় আমাদের ফাইটার ঘুরতে ঘুরতে পানিতে বা কাদায় পড়লো, তাইলে তার পারিশ্রমিক কম। ঘুসি খেয়ে টেবিলে পড়লে বেশি, টেবিল ভাঙলে আরো বেশি, আর সোফায় পড়লে কম।
-এ-তো খুবই সুন্দর বন্টন। আপনাদের নিশ্চয় এতে কোনো আপত্তি নেই?
-না। আপত্তি নাই। আমাদের ওস্তাদই সব।
-এখন তো কাজ বন্ধ, চলছেন কীভাবে?
-নিজেরা নিজেরা ফাইটিং করি।
-চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
-বড় ভিলেন হওয়া।