লোকটিকে বড় সুক্ষ্ণভাবে, বড় দক্ষতার সাথে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন একটু একটু করে। কেউ টের পায়নি। এমনকি হত্যার শিকার লোকটিও নয়।
প্রতিদিন তার খাদ্যে একটু একটু করে বিষ দেয়া হয়েছিল। এত সূক্ষ ছিল সে আয়োজন যে লোকটির শরীরও কোন ব্যতয় টের পায়নি। খাবারে অবশ্য রকমভেদ ছিল। যে খাবারটায় একটু বেশি বিষ পড়ে গেছে, সে খাবার খাওয়ার সময় তাকে বলা হয়েছে, “খাবার ঠিক আছে তো?….এটা নতুন আইটেম….এক্সোটিক টেস্ট! তা, একটু কেমন লাগতেই পারে।” লোকটি মাথা নেড়েছে; ভেবেছে, হয়তো এটাই টেস্ট। এক্সোটিক খাবার বলে কথা!
প্রতিদিন লোকটির বাতাসে মেশানো হয়েছিল বিষাক্ত গ্যাস। এত সূক্ষ ছিল সে আয়োজন যে লোকটির ফুসফুসও কোন ব্যতয় টের পায়নি। মাঝেমধ্যে বুকে ভারী কিছুর চাপ অনুভব করলে তাকে বলা হয়েছে, “লম্বা দমে শ্বাস নিন; তারপর আস্তে আস্তে ছাড়ুন। আপনার ফুসফুস আপনার যত্ন চাইছে মশাই।….” আরো আলোচনা হয়েছে; বলা হয়েছে, “জানেন, শিল্পবিপ্লবের সময় খোদ বিলেতের বাতাস কি যে ভয়ংকর ছিল! আমরা অনেক ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ।”
প্রতিদিন লোকটির পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য মেশানো হয়েছিল। এত সূক্ষ ছিল সে আয়োজন যে লোকটি তা ধরতেই পারেনি। শুধু চুল পড়া দেখে, গায়ে ফুস্কুড়ি দেখে, শরীরে অবসাদ আসতে দেখে বিমর্ষ মুখে ভেবেছে, একটু বিশ্রাম দরকার। তাকে বলা হয়েছে, “রেস্ট নেন। রেস্ট নেন। এত খাটাখাটুনি শরীর সইবে কেন!….”
প্রতিদিন লোকটিকে দ্বন্দ্বে ফেলা হতো। রাস্তায়, কার্যালয়ে, বাজারে সে মানসিক চাপ অনুভব করলে তাকে বলা হয়েছে, “এটা কোনো বিষয় হলো! এরচে’ কত কত কঠিন চিজ মানুষ হজম করে ফেলছে নিমিষেই! আপনি তো বেশ নাজুক দেখছি!…. লোকটি লজ্জা পেয়েছে।
এতদসত্বেও লোকটি বেঁচে ছিল। তার কোন অভিযোগ ছিল না; না নিজের কাছে, না অন্যের কাছে। বরং তাকে ঘিরে অন্যের কোন অভিযোগ আসে কি না- এ নিয়েই তটস্থ ছিল সে। এরপরেও সে মারা গেল। হত্যার সূক্ষ ষড়যন্ত্র এড়াতে পারলো না সে শেষ পর্যন্ত। কেউ খেয়াল করেনি বিষয়টি; আমি করেছি, খেয়াল করেছি বলেই লিখে যাচ্ছি এ ঘটনা। লোকটি টের পেয়েছিল; প্রতিবাদ করেনি। তাকে তার স্বপ্ন থেকে পৃথক করা হয়েছিল।