ভাগ্যান্বেষণ ও ল্যাডার টু শিপ

আমাদের তো ভাটির দেশ, খাল-বিল-হাওর-নদী ভরা, তাই গুদারা ঘাট, লঞ্চ ঘাট, ষ্টীমার ঘাট, ও বড় পরিসরে ঘাট, যাকে বন্দর বলে ডাকা হয়, এর সবই আছে। মাছ-ভাত পানি দিয়ে, খামার পানি দিয়ে, যোগাযোগ পানি দিয়ে…. তবে দিন দিন পানির ভান্ডার কমে আসতে থাকলে আমরা অনেকেই অন্য কোথাও জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।

আমরা যেখানে এলাম, কাজ পেলাম, কাজে দক্ষতা দেখালাম, সেখানকার স্থানীয় নাম জেটি। আমাদের বন্দরের মতই, তবে উন্নত। পরিস্কার আর নিয়ম শৃঙখলা পূর্ণ। আমরাও আমাদের কাজে শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলাম। একদিন আমাদের ডেকে জেটি ম্যানেজার কথা বললেন।
-শুনেছি তোমাদের এলাকায়ও এমন জেটি আছে। তোমারা ওখানে কাজ না করে এলাকা ছেড়ে এখানে এলে কেন? নিজ এলাকায় এসব কাজ করলে তোমারদের ভাগ্য পরিবর্তন হতো, তোমাদের এলাকারও উন্নয়ন হতো। এটা তোমাদের চিন্তায় আসেনি? কেউ তোমাদের বোঝায়নি?
আমরা দলবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাদের মাঝে থেকে একজন বলল, কেডা বুজাইবো! কেডা আছে অত বুজের ব্যাডা!
-কেউ নেই? কেউ তোমাদের ধরে রাখতে পারলো না? বেধে রাখতে পারলো না?
– আমরারে বাইন্ধা রাকবো কুন বান্দির ফুতে! হ্যারতা কাই না ফিন্দি?
-আহা, বেধে রাখা বলতে আমি আক্ষরিক অর্থে বাধাকে বুঝাইনি, বুঝিয়েছি এলাকায় রেখে দেবার মত কর্ম সৃষ্টি করে এলাকার উন্নয়নে তোমাদের নাম য়োগ করতে পারতো- এমন কেউ কি ছিল না?
-এএএহ! ইতা করনের লুকটা কেডা!
-কেন, কোনো লিডার কি ছিল না যে পথ দেখাতে পারতো?
-লিডার! লিডার আইবো কইত্তে!….

কথোপকথনের এই পর্যায়ে আমি মুখ খুললাম; কারণ অহেতুক প্যাচালে সময় নষ্ট হচ্ছিল, আর সময় নষ্ট হলে আর যাই হোক, সময়ের কাজ সময়ে শেষ হবে না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ না হলে কদরও থাকবে না, তখন এই ফোরম্যানই চালুক চালাবে।

আমি বললাম, ‘আমরা লিডার দেখেছি, সেল্ফ প্রোক্লেইমড লিডার। সেই লিডারের লিডারশিপ দেখিনি, দেখেছি ল্যাডার, ল্যাডার টু দ্য শিপ। সেটাকেই উত্তরণের পথ মনে করে শিপে উঠে গেছি, আর এখানে এসে পড়েছি।’

আমার জ্ঞাতি ভাইয়েরা জানে আমি কিছু ইংরেজি টক করতে পারি, যেটা এসব ক্ষেত্রে কাজে দেয়; আর জানে, আমি হক কথা বলি। আমার কথায় ইংরেজি অংশটা তারা কতটুকু বুঝলো জানিনা, তবে তারা সবাই সমস্বরে বললো, ‘হ, হ, ইড্ডাওই ইড্ডাওই।’

০৩/০৫/২০১৯
ঢাকা।