কিশোঞ্জালুক ও করোনা-২

Sufee Hefzur Rahman - Humour Stories

করোনা ভাইরাস যে কোন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য তার প্রকৃতি পাল্টে নিচ্ছে আর ব্যাপক ও বিস্তৃত আকারে মানুষকে আক্রান্ত করছে; সারাবিশ্বে মানুষ মারা যাচ্ছে হাজারে হাজারে- এসব দেখে কি মন ভালো থাকে? মন ভালো থাকে না। মন ভালো থাকার কোন কারণ আমি অন্তত খুঁজে পাই না। বিষন্ন মনে তাই ভাইকে ফোন দিলাম। ভাইয়ের সাথে কথা বলে যদি মনটা একটু হালকা হয় আর কি। কুশলাদি বিনিময়ের পরে বললাম, ভাই, দিন দিন তো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ভাই বললেন, ফরিস্থিতি খারাফ বানাইলে ত খারাফ অইবোই। পরিস্থিতি কি আর হাইদ্দা বালোইবো?
-ভাই, আমাদের পরিণতি কি? আমরা কোনদিকে যাচ্ছি?
-আমরা অহনো উজানোই যাইতাছি। তে বেশি দিন লাগদো না, ভাট্টাইতো অইবো। মরন দরলেঅই ভাইট্টানি শুরু অইবো।
-উজানো যাইতেছি মানে ভাই?
-উজাউরির গফটা জানো না? সারাজীবন শইল্লের জুড়ে উজানো ঠেইলছে, ফরে পানিত ডুইব্বা মইরা ভাট্টাইছে?

গল্পটা আমার মনে পড়ল। আমি বললাম, জ্বী ভাই জানি। আমাদের এলাকার গল্প। মনে পড়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে উজানে ঠেলা লোক কই!

-আরে কি কও! আমরা বেক্তেঅইত্ত উজানো ঠেলোইন্না লুক। দ্যাহো, হুজুর মৌলোবিরা কইছে করুনা আইতোনা। চিল্লায়া চিল্লায়া, ওয়াজ কৈরা কৈরা কইছে। পোরোস্তুতি সাবেরা কইছে সব পোরোস্তত আছে। কুনু সমস্যা নাই। কোরুনা আইলেওই খাঁচাত ঝাফায়া লায়াম। মাইনষে ইতা বিশ্বাস কোরছে, নিয়ম মাইনছে না…. এরফরে, গার্মেন্স গুর্মেন্স কুলা রাখছে, নিয়ম মাইনছে না। বাদে খরাফ ফরিস্থিতি অওনের ফরে বন্দ দিছে। বন্দ দিলেও বেতন দিছে না। ফিরাগবার খুলনের গুষনা দিছে, শ্ররোমিক মানুষটি প্যাডের লাইজ্ঞা, বেতনের লাইজ্ঞা জাতাজাতি কৈরা শ শ মাইল ফত হাইট্টা, টেম্পুত কৈরা, ট্রাহো কৈরা আইছে। বাদে গার্মেন্স বন্দের গুষনা দিছে মাইনষের জাতা কা’য়া। বন্দ দেওনে ফিরাগবার মানুষটি রাস্তাত ফোরছে, ফিরাগবার জাতাজাতি! কোরুনা দরতো না এরারে? এরারে ত জুর কৈরা করুনা দরানি অইছে। কি কইতাম বাই! এরা তগদিরের শিহার। এরার বাইরে যেরার খাওনের টেনশন নাই, হেরারে ত লক কইরাও গরো রাহোন যা’না! অষুধ আনতো যা’, ব্যাংকো যা’, বাজারো যা’ সহালো যা’ দুফোরো যা’ বিহালে যা’…. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লগে চুর-ফুলিশ কেলে। এরার বাবডা এমুন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না দরতারলে কোরুনাও দরতার তো না। ইতা উজানো ঠেলন ছাড়া আর কি!
– ঠিকই ভাই।
– খারোঔ, আরো কই। হাসফাতাল আর চিকিসসা লৈয়া অইছে আরো মছিবত। উজাঊরারা ডাক্তররারে ঢাল তলুয়ার না দেওই কইছে, যুদ্দ হর ব্যাডা! ডাক্তররা যুদ্দ শুরু হোরছে, মারা গ্যাছে বাদে ক’ “শহীদ” অইছুন। যুদি কোরুনা ঠিকমতো আটকানি যাইতো, আজগা অত রুগী অইতো না, আর ডাক্তর, হাস্ফাতাল, রাষ্টের অত ক্ষতিঅ অইতো না….।
ভাই একটু থামলেন। আমি চুপ করে আছি। দম নিয়ে বললেন, কয়ডা কতা কোয়াম! কৈয়া কি অইবো! হুজুররা অহনো শুক্কুরবার মোসিদো মুর্তি ফুজা লৈয়া কতা ক’। অতছ, যুদি কোরোনা লৈয়া কতা কইতো, মাইনষের উফকার অইতো। মাইনষে ত এরার কতা মাইন্য হরে। এরার ইড্ডা বুজন দরহার না?….
এম্নেদে রিলিফ দেওন শুরু হোরছে সরহার, হেই রিলিফ লৈয়া আরেক কামড়াকামড়ি। ইহানো-ও জাতাজাতি, মাইনষের ঠেলাঠেলি। শেষে মেম্বর চেরমেনরাওই রিলিফ মাইরা দিছে। বালোই হরছে।
– এটা কি বললেন ভাই! এত অমানবিক কাজ করলো এরা, আর আপনি বলছেন ভালো করেছে!
– বাই-রে, এই কতা কী আর সাদে কইছি! দুক্কে কইছি। কোরুনা আয়া আমরারে দেহায়া দিছে আমরা কই আছি। কোরুনা আয়া বুজাইছে আমরা কেমুন মানুষ। দ্যাহো, কোরুনা অইছে সন্দেহত্তে এলাহার মানুষ অসুস্থ মানুষরে গরো যাইতো দিছে না, এলাহাত ডুক্তো দিছে না, অসুস্থ মানুষ ফতো মরছে। কোরুনা অইয়া মারা গ্যাছে দেইক্কা গেরামের মানুষ মোসিদের খাডুলা দিছে না লাশ নিতো। বাফের লাশ ফালায়া গ্যাছে গা, মা’রে জঙ্গলো ফালায়া আইছে…. এরা ত আমরাওই। কোরুনা চিকিসসা হরে দেইক্কা ডাক্তর, নার্সেরারে বাড়িত ডুক্তো দিতো বাদা দে’। যেরা জান বাচানির কাম কোরতাছে, এরারেওই মাইরালাওনের ফত করছি! আমরা যুদি এমুন জানুয়ার অইতারি, রিলিফ মারোইন্না ব্যাডারা রিলিফ মারতো না কেরে! আমরার বিত্রের লুকোইত্ত এরা।

ফোনের এপাশ থেকে আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। আজ আর কোনো মন ভালো করার কিছু নেই। বললাম, ভাই, আমাদের জন্য কিছুই কি ভালো নেই?
– হুনো, খরাফ জিনিসও কিছু শিক্কা দিয়া যা’। এই কোরুনা যেই শিক্কা দিতাছে, ইড্ডা যুদি আমরা শিইক্কা লোইতারি, তে মনোহরো আমরা ববিষ্যতে বালা কিছুতা কোরতারুম।
-কি রকম ভাই?
– যেমুন দরো এক লম্বরে, আমরার স্বাইস্থ্য বেবস্তা বালো করন লাগবো। অহন যেমুন দাক্কা আইবার আগেওই সব তছনছ অবস্তা, এমুন যানি না থাহে।
দুই লম্বর, আমরার শিক্কা বেবস্তা বালা কোরতো অইবো। মোসিদ মারদাসাত যানি আসল শিক্কা দেওয়া অই, সহীহ হাদিস পড়ানি অয়, জ্ঞাইন বিজ্ঞাইন শিহানি অয়, ইড্ডা টিক করন লাগবো। খালি কইলে অইতো না, ইহুদীরা আমরার কুরান শরীফতে ইড্ডা হিড্ডা বানাইছে। আমরার কুরান শরীফতে আমরারওই ইড্ডা হিড্ডা বানানির মত শিক্কা দেওন লাগবো।
তিন লম্বর, যেরা উল্ডাফাল্ডা কতা ক’ আর যেরা গরীবের হক মারে, এরারে অযুগ্য গুষনা কইরা বাদ দেওন লাগবো। শাস্তির যুইগ্য অইলে শাস্তি দেওন লাগবো।
চাইর লম্বর, অত উন্নয়নের বিত্রেও কেরে মানুষ না খায়া থাকবো! গেরাম ফর্যন্ত জনফ্রোতিনিধি আছে, তার বাদেও অহন যেমুন সব তছনছ অবস্তা, এই অবস্তা দুর হরন লাগবো। যার যা দ্বায়িত্ব, হে যুদি ইড্ডা টিক মতো না হরে, শাস্তি দেওনঅই লাগবো। কামের সমো’ কাম যুদি না হরে, তে এরা কেরে আছে? খালি খাইতো?…

বাই-রে আরো কইতাম? আর কো’য়া কি হরতাম! শ্যাষ কোরি বাই? এট্টা কতা কো’য়া? আমরা সবেওই সবতা বুজি, খালি মানি না, ফালন কোরিনা। ফালনডা যুদি টিকটাক মতো কোরতারি,তাইলে আর জামেলা তাহে না।

১৯/০৪/২০২০