করোনা কাল চলছে। শুধু চলছে না, বেশ জোরেশোরে চলছে। শুধু জোরেশোরে না, মহাসমারোহে চলছে। পাঠ পর্যালোচনা বলে, অন্যান্য দেশে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করার মাস তিনেক পর, সংক্রমণের হার কমে এলেও, আমাদের এখানকার চিত্র উল্টা। আমাদের এখানে করোনা দিন দিন বলশালী হচ্ছে, অপ্রতিরোধ্য হচ্ছে। এ নিয়ে পাড়ার কবি সেদিন ফেবুতে লিখেছেন-
করোনার খরস্রোতা নদী
বইছে নিরবধি
দিচ্ছে ছুঁয়ে সবই
হচ্ছে দিনে যৌবনবতী
কত খাবি ওরে রাক্ষুসি!
আমরা অনেকেই লাইক, কমেন্ট করে পাশে থেকেছি কবি’র।
করোনা আসলেই বেশ করুণ পরিস্থিতি তৈরি করছে আমাদের দেশে। সংক্রমণের হার বাড়ছে, চিকিৎসা সংকট প্রকট হচ্ছে, মৃত্যু বাড়ছে। এখন আর এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, যার পরিবারের বা আত্মীয়ের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হয়নি, মৃত্যু বরণ করেনি। এসব নিয়ে মন বিষন্ন থাকছে অধিকাংশ মানুষের। আমার মনেও বিষন্নতা ভর করে সময় সময়। আমি বিষন্নতা কাটাতে দেশি ভাইয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা বলি।
ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হলো। সালাম ও কুশলাদি বিনিময়ের পরে জানতে চাইলাম করোনা মোকাবিলায় ভাইয়ের নতুন কোন প্ল্যান আছে নাকি।
ভাই বললেন, মাইনষেরে বুজাই টাটকা শাক সবজি কাও, ডিম, দুদ কাও, ব্যা’ম করো, আসিকুশি থাহো, আর মাতা বাচাও।
-আমি জিজ্ঞেস করলাম, মাথা বাচাও মানে?
ভাই বললেন, কোরুনাত্তে বাছার মন্ত্র ইড্ডাওই, ‘মাতা বাচাও, করুনা ঠেহাও।’ মাতা যদি নিরাফদ থাহে, তে কোরুনা আর দরতারতো না।
আমি ভাইকে বললাম, কিন্তু করোনা তো নাক-মুখ-চোখ দিয়ে ঢুকে ফুসফুসে যায়! মাথা আসলো কীভাবে!
ভাই বললেন, দেহো, মাইনষেরে সহজে বুজানির লাইজ্ঞা সহজ কৈরা কওন লাগে। তুমি যুদি কও চোক বাচাইন, মুক বাচাইন, নাক বাচাইন, কান বাচাইন, মাইনষে ভাববো, কত কি বাচাইতাম! আর তুমি যুদি কও, মাতাডা বাচায়া চোলুইন, কোরুনা দরতো না, তে মাইনষে কইবো, ইড্ডা করন ত সহজোই।
আমি ভাইয়ের কথার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম। আমার মনে হলো, এমনটা হলেও হতে পারে! মানুষ যে কত কী ভাবে! আমি বললাম, ভাই, এই মাথা বাঁচা-বাঁচি কীভাবে করবে মানুষ?
-সহজ। নাক, মুক, চোক ঘুইরা রাকবো। ময়লা কিছতা লাগানি যাইতো না, আত না দোইয়া, না ফরিস্কার কইরা মাতা দরন যাইতো না।
-এটাতে কি কাজ হবে?
-সবেরে ত আর বুজানি যা’না। সবে সবতা বুজদোও চা’না। যেরা বুজে, এরা টিকবো।
-ভাই, এলাকার কী খবর?
-এলাহা অহন টান্ডাওই আছে। দুয়েক জনের জ্বর-কাশি-দাস্ত অইছে। আল্লার রহমতে আমরার গেরামদে কেওই মরছে না। খরাফের মাইজে খরাফ ইড্ডাওই অইছে, সালেক কন্টেকটরের পুত হুন্ডা এক্সিডেন কৈরা মাতামুতা ফাডায়া লাইছে। আমরার বাড়ির সামনের বড় সড়কটার যে বিরিজডা আছে, ইড্ডার গুড়িত্তে চোলতি হুন্ডা লো’য়া ফানিত ফইরা গেছে গা। মাইনষে হুইন্না ক’, আল্লার মাইর, বিরিজের বাইর।
-সে কী! এসব কী কথা!
-ইতাওই! কন্টেকটোরির টেহা মাইরা চিপা রাস্তা, চিপা বিরিজ বানাইছে। এমুন রাস্তা বানাইছে, ছয় মাস গ্যাছে না; বিরিজ বানাইছে এমুন চিপা, দুইড্ডা রিস্কা যা’না। মাইনষে কষ্ট ভুগ কোরছে না? অহন যহন হের নিজের পুতোই এক্সিডেন কোরছে বিরিজের গুড়িত, মাইনষে ক’ অক্কের দান বক্কে। ক’, বিরিজের টেহার হুন্ডা, বিরিজের তলেওই গ্যাছে।
-এক্সিডেন্ট করল কীভাবে?
-বাফের দেওয়া হুন্ডা ফোর্সে চালায়া বিরিজো উটতো গেছিন, এম্নেদে, আইতাছিন টমটম, অক্করে মুহামুহি কারবার, টমটম বেরেক মারছে, আর হে হোন্ড লো’য়া বিরিজের তলে।
-আহারে! এমন একটা দুর্ঘটনা! আর মানুষ কীসব বলছে! এসব বলা ঠিক না!
-টিক ত না অই। অহন কী হরন যাইবো! মাইনষের মুক ত আর বন্দ রাহন যানা। বুইজ্জা কাম না করলে ত ইতা হুনোনই লাগে। কেরে, করিম মাস্টারও ত এক্সিডেন করছিন, দিঘির ঘাডো পইড়া পাও ভাঙছিন, কত মাইনষে ব্যাডারে দেকতো গেছে, দুয়া দুরুদ পোড়ছে। কন্টেকটোরের পুতেরে কেওই দেকতো গ্যাছে না।
-এটা তো ঠিক না। বিপদে সবার পাশে থাকা উচিত। অবশ্য এই করোনার টাইমে দূর থেকে দোয়া করাটাই উচিত।
-হ, টিহোই।
১৪/০৬/২০২০