কথা ছিল দশ মাইল ঠিকঠাক অতিক্রম করতে পারলে গাধা একটা গাজর পাবার যোগ্যতা অর্জন করবে তার ভাড়াটে মনিবের কাছ থেকে; কোনো ব্যত্যয় ঘটলে পাবে বেত। গাধা দশ মাইল বেত ছাড়াই অতিক্রম করল। দশ মাইল বেত ছাড়া অতিক্রম করার পর গাধার মনে খুশির ভাব এলো এই ভেবে যে, যেকোনো সময়ে সে একটা গাজর পাবে। এই গাজর সে অভিযোগহীন পথ অতিক্রম করার মাধ্যমে অর্জন করেছে। দেখা গেল, তের মাইল পেরিয়ে যাবার পরও গাধা কোনো গাজর পেল না।
তের মাইল পেরিয়ে যাবার পরও যখন গাধা কোনো গাজর পেল না এবং দেখল যে তাকে গাজর দেওয়ার কোনো লক্ষণই নেই তার ভাড়াটে মনিবের মাঝে, বরং তিনি কেবল বেত ঘুরিয়েই চলেছেন, তখন সে যতটুকু সম্ভব মুখ ঘুরিয়ে তার ভাড়াটে মনিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, মাই বাপ, গাজরটা দিবেন না? বার মাইল পার হইয়া তের মাইলও যায় যায়! গাজর কই! খালি তো বেত চালায়া গেলেন, গাজর…
সওয়ারী এই ধৃষ্টতার অপেক্ষায় যেন ছিলেন; গাধার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রোষের সাথে বললেন, তর এতবড় সাহস, তুই আমারে প্রশ্ন করস! বেয়াদব! তুই যে বেয়াদব, তুই যে বেয়াদবি করবি, এইটা আমি জানি। তর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেয়াদবি। তরে টেস্ট করার লাইজ্ঞাই এতক্ষণ আমি গাজর দেই নাই। এখন তুইও প্রমাণ পাইলি তুই কতবড় বেয়াদ্দপ! তর মত বেয়াদ্দপের লাইজ্ঞা বেতই বরাদ্দ।
গাধা গাধাই; তার হুঁশ ফিরল না; বলল, মাই বাপ, কথা ছিল ঠিকঠাক দৌঁড়াইলে দশ মাইল পরে গাজর দিবেন। আমি ত ঠিকঠাকই দৌঁড়াইছি। আপনে ত কুনু অভিযোগ করেন নাই এতবেলা। তাইলে কেন আমারে
ভাড়াটে মনিব চেতে গিয়ে বলল, গাধার বাচ্চা, তুই মনিবের লগে তক্ক করছ! দুই ঘা পড়ার আগে দোঁড়া! বেত্তমিজ! দেহি তরে কে গাজর দেয়!
গাধার তবুও চেতন হলো না। গোঁয়ারের মতো সে বলল, আপনে দেখেন, ঘোড়াটা দশ মাইল যাওয়ার আগেই টুকটাক ছোলা পাইছে, দশ পার হইতেই ছোলার ঝুড়ি দিয়া দিছে ওরে। মহিষরে খড়-বিছালি দিছে এগার মাইল যাইতেই। কাছিমও পাইছে। কুত্তা….
ভাড়াটে মনিব ক্ষোভে ফেটে পড়লেন; বললেন, অই হালার পো, তুই কি ঘোড়া? তুই কি মহিষ? তুই হইলি গাধা, গ আকারে গা, ধ আকারে ধা, গাধা। গাধার বাচ্চা গাধা। আর একটা কথা ক’বি তো পিটায়া তর পাছার ছাল তুইলা ফেলব। উদাম পাছা নিয়া তুই…
গাধাটা রাগে-অভিমানে গজগজ করতে করতে জোর কদমে এগিয়ে যেতে থাকে….
১৭.০৫.২০২৩
চট্টগ্রাম।