(বিষয় ও ঘটনা সত্য। নাম কাল্পনিক।)
১)
মোখলেস একটা চাকরি করতো; চাকরির সুবাদে সে একটা বাসা পেয়েছিল। তার চাকরি ও বাসা ছিল -কারী। এই -কারী কোন কারী, সর না বেসর- এসব অজানা থাকুক। জানা গেলে, সর ও বেসর- উভয় পক্ষই নাখোশ হতে পারেন। তবে এটুকু বলা যায়, চাকরি ও বাসা উভয়ই তার জন্য ছিল যে কারী ছিল, সেটি হলো দর, অর্থাৎ দরকারী।
২)
সব দিন সমান যায় না, সব গাছে ফুল ধরেনা, সব নদীতে মাছ আসেনা, মোখলেসের চাকরিও নির্ঝঞ্ঝাট থাকেনা। কারণ, চাকরি পেয়ে তার মুই কি হনু জ্ঞান সময় সময় তার মাথা বিগড়ে দিত। তখন সে লোক ডেকে, ধরা কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতো, “এইটা কি সরা?”
এসব প্রায় পাঁচ বচ্ছর চলার পর একদিন একদম হঠাৎই, মোখলেসের চাকরিটা নাই হয়ে গেল। মোখলেস পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলো। সে দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে সে ‘টারমিনেট’ হতে পারে। কিন্তু সবকিছু তো আর সবার জ্ঞাতসারে হয়না! কি আর করা!।
মনে কষ্ট নিয়ে মোখলেস চাকরির চেষ্টায় নামলো; আর রাগ ক্ষোভ ইত্যাদি মনে নিয়ে বাসাটা দখলে রেখে দিল। দেড় মাস পর বাসা ছাড়ার জন্য নোটিশ এলে সে নোটিশ না রেখে ফিরিয়ে দিল। তারও একমাসের মাথায় আবারও নোটিশ এলে এবার সে আর ফিরিয়ে দিল না, বার্তাবাহকের সামনেই তেড়েফুঁড়ে নোটিশটা ছিড়ে ফেলল। বার্তাবাহককে বাসা ছাড়ার জন্য নোটিশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের লোক জ্ঞান করে তাকে শাসানি দিল। “গিয়া কইস, নিটিশ ফুটিশ যা দেওয়ার আগেই দিছে। এহন এইসবে কুনু কাম হইবে না। মুক্লেছ এইসব নুটিশ ফুটিশ আর পুছে না। কারু বাপের ক্ষমতা থাকলে কইস আমারে এই বাসা থেইক্কা উঠাইতে।”
বাসা যাকে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সে লোক মোখলেসের মোবাইল ফোন নম্বর যোগাড় করে একদিন ফোন দিল, বলল, ‘ভাই, বাসাটা আমারে বরাদ্দ দেয়া হইছে সেই কবে! আপনে না ছাড়লে তো বাসায় উঠতে পারতেছিনা।’
মোখলেস গতানুগতিক স্বভাবের মানুষ। ফোন করা লোকটার নরম কন্ঠ শুনে তার ভেতর আরো তেজ জন্মালো, ভাবলো, ‘হালা ত দেহি নরম পাবলিক। অরে চাপাইতে হইবো।’ মুখে বলল, ‘বাসা এখন ছাড়তে পারুম না। ঝামেলায় আছি।’ বলেই মোখলেস ফোন কেটে দিল, এবং নম্বরটা ব্লক করে ফেললো।
৩)
সময় যায়। মোখলেস বাসা ছাড়েনা। নোটিশ এসে ক্ষত বিক্ষত হয়। এক বন্ধের দিন সন্ধ্যায় মোখলেসের বাসার দরজায় কেউ নক করলো। মোখলেস তখন বাসাতেই, বাথরুমে ছিল। দরজায় নক শুনে সে বাথরুম থেকে বের হয়ে লুঙ্গি গিঁট দিতে দিতে দরজার কাছে এসে চড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো, কে!
দরজার অপর পাশ থেকে নরম কন্ঠে একজন যুবক বললেন, “ভাই বাসার জন্য আসছিলাম। একটু কথা বলতাম।’ নরম গলা শুনেই মোখলেসের মেজাজ এমন খারাপ হলো! মেজাজ খারাপ হলো, কারণ নরম গলা শুনে মুহূর্তের মাঝেই তার অবচেতন মন তাকে এই ধারণা দিলো যে এর উপর চড়াও হওয়া যাবে। মেজাজ ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে সে বলল,
-বাসার বিষয়ে কি কথা! বাসার বিষয়ে কুনু কথা নাই।
-ভাই একটু দরজাটা খুলেন। দুইটা কথা বলি!
-দরজা খুইলা কথা বলার কিছু নাই। যান, কাজে যান।
-ভাই, কাজে অবশ্যই যাবো। কাজ না করলে খাবো কি! তবে ভাই, আমার অসহায় অবস্থা যদি একটু দেখতেন, তাইলে হয়ত আপনার দয়া হইতো।
-হালার…..
বিড়বিড় করতে করতে মোখলেস দরজার ছিটকিনি টান দেয়, ছিটকিনি নামতেই, দরজার হাতল ওপাশ থেকেই মোচড় দিয়ে দরজা সামান্য খুলতেই মোখলেসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুই তিনজন লোক বাসায় ঢুকে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় মোখলেস পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে ভেবেছিল কড়া করে ঝাড়ি দেবে, বাসা পাওয়ার শখ মিটিয়ে দেবে; কিন্তু এমন অকস্মাৎ আক্রমণে সে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। লোকগুলো বাসায় ঢুকেই মোখলেসকে লাগাতার চড়া গলায় গালাগাল করে বলতে থাকে, “অই #৳%& পোলা, তুই মোখলেস? বা*তের বাচ্চা তুই বাসা দখল কইরা রাখছছ? তর বাপের বাসা এইডা? তর কোন বাপের? ঐ বাপেরে জিগাইয়া লইছিলি?….”
মোখলেস আল্লাহ আল্লাহ করে মনে মনে বলতে থাকে, ঘরের ভিতর রুম থেকে যেন বউ বের হয়ে না আসে, আসলে ওর ব্যাটাগিরি, ওর বাহাদুরি, ওর মর্দাঙি চিরতরে শেষ! গালিগালাজ সত্বেও এই চিন্তা তাকে পেয়ে বসে। মাস্তানগুলো বলে চলে, “শু#৳র বাচ্চা তরে দুই দিন সময় দিলাম। দুই দিন শেষে আইসা তরে যেন না দেখি! দেখলে তরে কি করুম জানস? তরে #৳%&&*@#%%& দিমু। “
মোখলেস এর মাঝেই কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে; তার মুখে কথা ফুটলো, চিঁচিঁ করে সে বললো, “ভাই, একটা নিরীহ মানুষরে এমনে বলতেছেন! আইজ আমি গরীব বইলা এমনে কইতেছেন! আমার ক্ষমতা থাকলে কি এম্নে কইতে পারতেন?”
পোলা আবার কতা কস! কাইট্টা তর দিয়া সাটায়া দিমু। ইত্যাদি ইত্যাদি।
মোখলেসকে বাসা ছাড়তে হলো। সে গরীব। গরীবের বিচার নাই।
(এই গল্পে গরীবের প্রতি মস্করা আমিও করেছি এক জায়গায়। বুদ্ধিমান পাঠক সেটা ধরে ফেলবেন,আমি নিশ্চিত।)