টং দোকানে চা খেতে খেতে আনমনে আমার চোখ গেল রাস্তায় দাঁড়ানো রিক্সার দিকে। রিক্সায় একজন ভুড়িওয়ালা লোক বসা। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। চোখ ফেরাতে ফেরাতেই মনে হলো, লোকটা তো যাত্রীর সিটে বসা না! চালকের সিটে বসা! চালকের সিটে ভুড়িওয়ালা লোক! এটা কী করে সম্ভব! আমি আবারো তাকালাম। এবার রিক্সার দিকে এবং তাকিয়ে বুঝলাম হিসেব ঠিক আছে। ইঞ্জিনের রিক্সার চালকের ভুড়ি হতেই পারে।
আমাদের গ্রাম থেকে বাজিতপুর বাজার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। আমার দাদা ও চাচারা (আমার দাদারা ছিলেন নয় ভাই, আমার চাচারা চৌয়াল্লিশ জন) হেঁটে যাতায়াত করতেন। তাদের ডায়াবেটিস নামক রোগ ছিল না। তারা তিনবেলাই ভাত খেতেন। আজকাল বাড়িতে গেলে জানা যায় আমার বয়সী এবং আমার চেয়ে কম বয়েসীরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাজিতপুর থেকে বাড়ি পর্যন্ত অটোরিকশা চালু হয়েছে অনেক দিন হলো।
মোবাইল ফোন প্রায় সবার হাতের নাগালে চলে আসার পর দেখা গেল বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন, স্বামীরা স্ত্রীদের নিয়ে এবং স্ত্রীরা স্বামীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। পড়ালেখা হচ্ছেনা, পরকীয়া হচ্ছে, চুগলখোরি হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ফাঁকে নিজের কথাটাও বলি, আগে আমিও ডায়রিতে লিখতাম, এখন মোবাইলে লিখি। মোবাইলে লিখে চোখ খেয়ে দিয়েছি প্রায়।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। এই কথার মাহাত্ম্য সেসময় অতটা না বুঝলেও এখন বুঝি। আমাদের দিকে তাকালেই এর মাহাত্ম্য টের পাওয়া যায়। আমরা সহজলভ্য সবই নিয়েছি এবং এর উপযোগিতা ও সীমারেখা না জেনে জীবনে প্রয়োগ করে ধরা খেয়েছি। ধরা খেয়েও আমাদের হুঁস নেই। আরো ধরা খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হচ্ছি, ধরা খাওয়াতেও ক্রেডিট খুঁজে নিচ্ছি।
কী হবে আর এসব বলে! আমরা শোধরাবো? শোধরাবো না। এসব চলতেই থাকবে। কেউ শুনবে না! রাস্তায় জ্যাম পড়তেই থাকবে আর চোখ খুলে হাতে চলে এলেও আমি জ্যাম সাহিত্য লিখতে থাকবো। শোধরাবো না।