ঢাকা শহর যে জ্যাম উৎপাদন করে, তাকে কি আমরা আলাদা করে কোন নাম দিতে পারি না? হাজার হোক, বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্র’র শতাধিক রাজধানী ঘেঁটেও “এমন ‘জ্যামটি’ কোথাও খুঁজে পাব নাকো তুমি” এ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমি বিশ্বাস করি শুধু এই পৃথিবীতে না, এই পৃথিবীর বাইরে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে যত রাজধানী আছে, কোথাও আমাদের মত এমন ঐতিহ্যবাহী জ্যাম নাই। প্রতিদিন, সপ্তাহে ৭ দিন, কোন ছুটিছাটা নাই, সকাল থেকে মাঝ রাত অবধি জ্যাম লেগেই আছে। লেগে থাকার সুখ, জ্যাম আমাদের প্রতিনিয়ত শেখাচ্ছে। এমন জ্যাম কে কবে পেয়েছে? কোথায় পেয়েছে? এমন মহৎ জ্যাম কি নামহীন থেকে যাবে? এটা কি হতে পারে?
আগের দিনে বাংলা মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল, নদীমাতৃকতার জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন জ্যামের জন্য বিখ্যাত। অবশ্য এককভাবে শুধু জ্যামের জন্যই বিখ্যাত না, আরো বেশ কিছু জিনিস ঠাঁই পাবে এই তালিকায়, তবে সেগুলো নিয়ে আজ বলব না, বলতে গিয়ে জ্যামের গুরুত্ব কমাবো না।
কবিগুরু বলেছিলেন-
“বাদল দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান”
আমি ঢাকার রাস্তায় বসে বলি-
জ্যামে বসে জগত ভেবে প্রাণ করে আনচান
সত্যিই জ্যামে বসে আমার মাথায় রাজা, রাজত্ব, রাজকন্যা, বন্যা, খরা, মরা, ধরা- কত্ত কি যে মনে আসতে থাকে! কোন ট্রাফিক নাই বলে এসব ভাবনাকে কেউ আটকায় না, কোন জ্যাম নেই বলে ওরাও থামে না, প্রবল বেগে মাথায় এসে ভর করে।
আজ মাথায় এসে ভর করলো ডিগ্রীর গল্প, পি.এইচ.ডি. ডিগ্রীর গল্প। আর সব পণ্যের মত পি.এইচ.ডি ডিগ্রীটাও বিক্রি হয় কোথাও কোথাও, এ কথা শুনেছি বহু বহু বছর আগেই। তবে এটি যে এখন কতটা সহজলভ্য তা জানলাম সম্প্রতি। খুব কাছের এক সুহৃদের কাছে জানতে পারলাম যে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী লাগবে কি না- এটা জানতে এখন “ডোর টু ডোর” সেলিং এর মত “দপ্তর টু দপ্তর” সেলিং নাকি শুরু হয়েছে।
“আপনি কি একটা ডক্টরেট নেবেন? অনেকেই নিয়েছে। আপনার পরিচিত দু একজনও আছেন, যারা আমার কাছ থেকে ডক্টরেট নিয়েছেন।” এভাবেই নাকি এপ্রোচ করেন ডক্টরেট বিক্রেতা। শুনে আমার উর্বর মাথায় এই ভাবনা এলো যে, এভাবে চলতে থাকলে তো ডক্টরেট ডিগ্রী হাটে ঘাটে ঝাকায় করে বিক্রি হবে! যে কেউ একটা ডিগ্রী কিনে নিয়ে হয়ে যাবে ডক্টর। দেখা যাবে, শিক্ষা বিমুখ একজন পাতি নেতা টাকা জমিয়ে একটা ডক্টরেট কিনে নিয়ে হয়ে যাবে, “জননেতা ডক্টর হাজাম আলি”, একজন টং দোকানদার ডক্টরেট কিনে নিজের দোকানের নাম রাখবে, “ডক্টর চা ঘর”। এভাবে এসব চলতে থাকবে….
দপ্তর এলাকায় যখন ঝাকায় করে ডক্টরেট ডিগ্রী বিক্রি হবে, তখন অফিস শেষ করে সাহেব বাসায় মেম সাহেব কে ফোন করবেন। তাদের মাঝে কথোপকথন হবে এই রকম-
-হ্যালো, শুনছো? বাসায় আসছি। শোনো আজ খুব সস্তায় ডক্টরেট ডিগ্রী পাইছি। কয়েকটা নিয়ে আসব?
-আবার ডক্টরেট! কয়টা লাগে তোমার!
-আরে আনিই না! সস্তা তো!
-আচ্ছা, আনো। ওগুলো কোন ঘরানার?
– লাল আর হলুদ।
-সবুজ নাই?
-নাহ। সবুজ নাকি খুব কম সেল হয়। আর প্রডিউসাররা নিজেরাই সেসব রেখে দেয়। শোন, আমাদের জন্য লাল বা হলুদ ও খারাপ না। কি বল?
– না, লাল-হলুদ আমাদের অনেক আছে। আর লাগবে না।
-আরে এত সস্তায় আর পাবো না। তোমার সাংবাদিক ভাইটার জন্যও একটা নিয়ে আসি, কি বলো?
-ঠিক আছে, আনো, তবে বেশি না, আনলেইতো খোকা সব ছিড়ে ফেলে।
-আরে বোকা, খোকার আনন্দ দেখাটাও তো কম না….!