আমি সুযোগ পেলেই তরুণ, যুবকদের আড্ডা অনুসরণ করি। রাস্তার মোড়ে, চায়ের স্টলে, মাঠে, ক্যাম্পাসে- যেখানেই তরুণদের জটলা থাকে, সেখানেই গিয়ে সময় সুযোগ মত তাদের কথা শুনি। তরুণরা কী করছে, কী ভাবছে, তাদের চিন্তাধারা, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তাদেরদেশ-সমাজ-রাষ্ট্র ভাবনা জানতে আমার খুব ইচ্ছে হয়। তাই তাদেরকে যেখানে দেখি, সময় সুযোগ থাকলে, আশে পাশে থেকে ওদের কথা শুনি। আমার ভালো লাগে। তরুণেরা আমাকে উজ্জীবিত করে।
উত্তরা হাউসবিল্ডিং থেকে খালপাড়ের দিকে যেতে ১২ নং সেক্টরের শুরুতে একটা চৌরাস্তা আছে, ঐ চোরাস্তার উত্তর পাশে আগে আশেপাশের সেক্টরগুলোর ময়লা ফেলা হত, রিক্সাওয়ালারা একে ময়লার মোড় ডাকত। সেই ময়লার মোড় পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই চায়ের টং দোকান আছে কিছু। ঐ দোকানগুলোতে তরুণ যুবকেরা আড্ডা দেয়। আমার সময় সুযোগ হলে আমি চা খাওয়ার ভান করে ওদের কথা শুনি।
একদিন একটা আড্ডা শুনছিলাম। ছেলেগুলো ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছে, এখন উচ্চতর শিক্ষার জন্য কি করবে, কোথায় কোথায় পরীক্ষা দেবে, একধিক বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের সুযোগ পেলে কী করবে, কোথাও সুযোগ না পেলে কী করবে – এইসব নিয়ে বেশ জম্পেস আলোচনা চলছিল। দোকানদার ও ওদের কথার মাঝে মাঝে দু একটা ফিলার দিচ্ছিলো। এক তরুণ এক ফাঁকে বলল, ‘দুইটা গোল্ডেন জিপিএ নিয়াও যদি কোথাও চান্স না পাই, তাইলে আর দেশেই থাকুম না। বাপেরে কমু, আব্বা অনেক করছেন, লাস্ট একটা উপকার করেন, আমারে বিদেশ পাঠায়া দেন। যা করার বিদেশ গিয়ে করমু’।
দোকানদার বলল, ‘বিদেশ যাইবেন গা মামা! বিদেশ গিয়া কী হইব, বিদেশে যা করবেন, সেইডা দেশেই করেন।’
‘বিদেশে গিয়া যা করব, দেশ তো আমারে সে সুযোগ দিব না।’ বলে ছেলেটা একটু থামল, তারপর বলল, ‘হায়রে, কি দেশে যে সহবাস করি মামা!’