বাল্যবিবাহ

কিশোঞ্জালুক

বাল্যবিবাহ নিয়ে টিভিতে টকশো চলছে; অর্ধচন্দ্রাকার এক টেবিল ঘিরে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তিন বক্তা ও এক সঞ্চালক বসেছেন। টকশো জমে উঠেছে, বক্তারা একে অপরের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে চলেছেন বাল্যবিবাহ কেন হয়, কোন এলাকায় বেশি হয়, এর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট- ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন বক্তাই ঠিক মতো বক্তব্য শেষ করতে পারছেন না, অন্য বক্তা কথা কেড়ে নিচ্ছেন, কথা কেড়ে নিয়ে পূর্ববর্তী বক্তার কথায় কিছু যোগ করছেন না, বরং নতুন কোন এঙ্গেল এনে দেখিয়ে দিচ্ছেন এ বিষয়ে তার জানকারি বেশি, এবং আগের বক্তার কথার তেমন সারবত্তা নেই। দর্শকের মনে নূন্যতম সন্দেহের অবকাশ আসার সুযোগ নেই যে, যারা এসেছেন, সবাই বাল্যবিবাহ বিশেষজ্ঞ।
আমি ভাইয়ের সাথে ছিলাম। ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে টকশো শুনছেন দেখে বললাম, ভাই, দেখছেন, বাল্যবিবাহ নিয়ে কী ধুন্ধুমার কান্ড হইতেছে?
এলাকার ভাই, কিশোঞ্জা লুক বললেন, দেক্তাছিওইত্ত! কী তামসা যে জুড়ায়া দিছে!
-তামসা কুন্ডা ভাই?
-দ্যাহ না, বাইল্য বিবাহ বিশেষজ্ঞ জ্ঞেয়ানিরার কতা! এহেকজন মনো’ পিএজডি কইরালাইছে বাইল্য বিবাহ লো’য়া! ব্যাকতা জাইন্না বো’য়া রইছে! আসলডা কেওই কইতাছেও না, জানেও না।
– আসলডা কী ভাই?
– বাইল্য বিবাহর আসল কারণ। কেওই কইতাছে না। কইবো- এমুনডা মনো’ও অইতাছে না।
– কী কারণ ভাই?
– আমরার হাজার বছ্রের ঐতিহ্য, বাইল্য বিবাহ। অত সহজোই বাদ দেওন?
– ভাই, হেঁয়ালি রাখেন। বাল্যবিবাহ আমাদের ঐতিহ্য হলো কিভাবে বলেন।
– তুমি রূপবানের কতা হুঞ্চ না?
– হ্যাঁ, শুনেছি! শুনবো না কেন! কিন্তু এখানে রূপবান এলো কোত্থেকে! ও, বুঝেছি, রূপবানের বাল্যবিবাহ হয়েছিল।
– এইত্ত দইরালাইছো। আমরার রূপকথার নায়িকার বাইল্য বিবাহ অয়, অওয়ার ফড়ে স্বামী সংসার সামলাইতো বনোবাস যা’….আমরার মা চাচীরা ছুডুবেলাত্তেওই ইতা হুনে, মনো মনো বাবে, তারারও বারোবছর অইলে গটনা গইট্টা যাইবো গা। বাইল্য বিবাহর খুডি ত ইহানোই বান্দা।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঘটনা তো আসলেই জটিল! গ্রামের মানুষ তো এইসব গল্পেই দিনযাপন করে! তবুও ভাইকে বললাম, ভাই, অন্য দেশেও কি এমন রূপকথা নাই? সেখানে তো এমন হচ্ছে না!
– দ্যাহো, ইংরেজরার রূপকথার মাইজে যে মেয়েগুলান আছে, আমার জানামতে এরা সবই লায়েক। যেমুন দরো, লাম্বা চুলের ছেড়িডা, তার বয়স আডারো (১৮); বাদে সিনডারেলা, তার বয়স উন্নিশ (১৯), এমুন কইরা দেকবা হেরার পেম পিরিতির গফের সবডি ছেড়িওই লায়েক। আর কী কইতাম!