আকাশে আজ সুপার মুন। সুপার মুন মানে হল বড় চাঁদ। এ চাঁদ নাকি ৬৮বছর পর পর দেখা যায়।
১) আজ রাতেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে, এমন কোন আসামিকে ফাঁসির আগে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার শেষ ইচ্ছা কি, আর সে যদি আমার মত বুদ্ধিমান হয়, তবে বলবে, “হুজুর, এই সুপার মুন ভাল দেখাতে পাই নাই। আরেকটা সুপার মুন দেইখা মরতে চাই।”
ফাঁসির রাতে যদি হ্যালির ধূমকেতু দেখা যেত আর ঐ আসামি যদি “দেখতে পাই নাই” বলে সেটাই আবার দেখতে চাইত- তাহলে কিন্তু খেলা জমে যেত।
২)সুপার মুনীয় উম্মাদনায় পড়ে আমিও তার সৌন্দর্য নেবার চেষ্টা করলাম। অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ির জানালা দিয়ে বহু কসরত করে সুপার মুন দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্ত সফল হতে পারলাম না। দেখলাম বারোয়ারি গাড়ির চোখ জ্বালানো আলো, আর হলুদ নিয়ন বাতি। ভাবলাম বাসায় গিয়ে ব্যালকনিতে বসে প্রাণ ভরে সুপার মুন দেখব। বাসায় এসে দেখি সেই একই প্রতিবন্ধকতা- কৃত্রিম আলো আর শব্দ! খুব মন খারাপ হল। সবাই সুপার মুন কতই না উপভোগ করছে, ফেসবুক ভরিয়ে দিচ্ছে সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে; আর আমি এখানে ব্যালকনিতে বসে ঝুলছি!
মনে মনে ভাবলাম, আহা, প্রকৃতির মাঝে গিয়ে যদি এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতাম! ভাবতে ভাবতে
প্রকৃতির মাঝে গিয়ে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করার একটা ঘটনা মনে পড়ল । আমার ভাই বন্ধু Iqbal Mohiuddin Khan এই সত্য ঘটনাটি বলেছিল।
ভরা পূর্ণিমার সৌন্দর্য বঞ্চিত এই নগরবাসীর জন্য একটা টুরিস্ট গ্রুপ “পূর্ণিমা উদযাপন” নামে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করল। এই নগরে চাঁদের প্রকৃত রূপ দেখা যায় না বলে তারা নগরবাসীদেরকে প্রকৃতির মাঝে নিয়ে প্রকৃত পূর্ণিমার অপরূপ রূপ অবগাহনের ব্যবস্থা করল। তাদের অনুষ্ঠান সূচি ছিল এইরকম-
৭:৩০ গাবতলি বাস স্ট্যান্ডে সমবেত হওয়া,
৮:০০ রাতের খাবার গ্রহন,
৮:৩০ বাসে চড়ে গ্রামে রওনা
গ্রামে পৌছে ভরা পূর্ণিমা উপভোগ শেষে ভোরে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন।
এই বিশাল প্যাকেজের মূল্য মাত্র ২৫০/- টাকা!
যারা জানতে পারল, তারা এত অল্প টাকায় এত বড় একটা আয়োজন মিস করতে চাইল না।
ঘটনার দিন সৌন্দর্য পিপাসু সকল অংশগ্রহণকারী গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হল। রাত ৮টায় তাদের কে ওখানেই একটা ছাপড়া হোটেলে পাতলা খিচুড়ি ও ডিম ভাজি দিয়ে “রাতের খাবার গ্রহন” করানো হল। খাবার শেষে গাবতলি-সায়েদাবাদ রুটের একটা লোকাল বাসে সবাইকে উঠানো হল। ওটা ছিল টুরিস্ট বাস। বাস সাভারের হেমায়েতপুরের ভেতর দিয়ে গ্রামের পথে ঢুকে গেল। কিছুদূর চলতেই বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত এসে গেল, বাস থেমে গেল, সবাকে নামানো হল, ধান ক্ষেতের আল ধরে ক্ষেতের মাঝে সবাইকে আনা হল, প্রধান গাইড বলল, দেখুন ভরা পূর্ণিমার কি অপরূপ সৌন্দর্য!
সৌন্দর্য গ্রহণে আনাড়ি নগরবাসীদের আপত্তিতে রাত আড়াইটার দিকে সবাইকে আবার গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে এনে অবমুক্ত করে দেয়া হল। আহা কি আয়োজন ছিল!
এখন ভাবছি এই সুহৃদ আয়োজককে যদি পেতাম!
৩) সুপার মুন কারা বেশি উপভোগের সুযোগ পেয়েছে বলতে পারবেন?
পারবেন না।
পেয়েছে নাসিরনগর আর গাইবান্ধার কিছু লোক। তবে তারা কিন্তু নিজেদের ইচ্ছায় এই সৌন্দর্য ভোগের সুযোগ পায়নি। তাদেরকে এই সৌন্দর্য উপভোগে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের অনেকের মাথার উপরের ছাদ ছিল না, ঘরে কৃত্রিম আলো ছিল না, আর আলো থাকবেই বা কোত্থেকে! তাদের তো ঘরই ছিল না! সৌন্দর্য উপভোগের এক অব্যর্থ আয়োজন।
একদল পরোপকারী এই ব্যবস্থা করেছে।
আমরা খুব অকৃতজ্ঞ। যারা এমন পরোপকার করেছে তাদের কোন উপকার আমরা করিনি। করতে পারিনি। উপকার করার জন্য তাদেরকে আমরা খুঁজেই পাইনি! তবে খোজ নাকি চলছে। দেখা যাক। পাওয়া গেলে আমরা প্রতিদান দেবো। আশায় আছি।