বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে, এক তপ্ত দুপুরে আমার বন্ধু পলাশ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চা পান করতে করতে বলেছিল, দোস্ত, আমি একটা সেইরকম জিনিয়াস পোলারে পড়াই। মাত্র ক্লাশ এইটে পড়ে, কিন্তু কী মাথারে ভাই!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী রকম?
পলাশ বলল, মনে কর, যেকোন বিষয়ে তুই ওরে ইংরেজিতে রচনা লিখতে দিবি, ও তোরে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রচনা লিখে দেবে।
কস কী!
হ। সমস্যা একটাই, পুরো রচনায় তুই কোন ভার্ব (verb) খুঁজে পাবি না।
শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা শেখানোর জন্য আমাদের মহাবিদ্যালয় যুগের পরে কম্যুনিকেটিভ মেথড চালু করা হয়। আমরা যারা গ্রামার ট্রান্সলেশন মেথডের ফসল, তাদের কাছে বিষয়টি ছিল অভিনব, এবং হতবুদ্ধিকর। হতবুদ্ধিকর এ অর্থে যে টিউশনি দিতে গিয়ে দেখি শিক্ষার্থীরা বেসিক গ্রামার জানে না। তাদের শেখানো হচ্ছে কথা ও লেখার মাধ্যমে কোন রকমে মনের ভাব বোঝাতে পারা। প্রাচীনপন্থী আমাদের জন্য এটা বেশ অবাস্তব ও হাস্যকর পদ্ধতি বলে মনে হলো। মনে হলো একারণে যে, কমিউনিকেটিভ মেথডে ইংরেজি শেখানোর প্রধান শর্ত হলো ইংরেজি বলা ও শোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা। বলাবাহুল্য যে আমাদের দেশে এরকম কোন পরিবেশ নেই; এবং নিশ্চিত করা হয়নি। ফলাফল, সেই বিখ্যাত গল্প, “স্যার, ফার্স্ট হি কিল মি, দেন আই কিল হিম।” অর্থাৎ প্রথমে সে আমাকে কিল মেরেছে, পরে আমি তাকে কিল মেরেছি।
সেসময় ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, এলাকার এমন একজন ছাত্রকে পড়ানোর ঢেঁকি গিলতেই হচ্ছিল। গেলাম পড়াতে, গিয়ে বিসমিল্লাহ থেকে শুরু করলাম। এক সপ্তাহ পারসন পড়িয়ে পরের সপ্তাহে জিজ্ঞেস করলাম, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নম্বর কোনটা?
ছাত্র সরল উত্তর দিল, স্যার উই।
আমি ঢেঁকি উগড়ে দিলাম। ভেবে পাইনি সে কীভাবে এসএসসি পাস করেছিল। ভেবেছিলাম সে হয়তো ইন্টারে পেরুতে পারবে না। ওমা, দেখি সে ইন্টার ভালোভাবেই উৎরে গেছে আর ইংরেজিতে এ মাইনাস পেয়েছে!
একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দিয়েছিলাম প্রভাষক হিসেবে। সেসময় ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের মাঝে যাদের গ্রেড নম্বর কম, তাদের একটা যাচাই পরীক্ষা নেয়া হতো। সেরকম যাচাই পরীক্ষায় প্রায়শই দেখতাম, ইংরেজি পড়তে আসার কারণ হিসবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইংরেজিতে দুর্বলতার কথা বলছে; বলছে, আই উইক ইন ইংলিশ। সো আই ওয়ান্ট ইংলিশ স্টাডি। এক ছাত্র বলেছিল, নোবডি কেন নট মুভ ওয়ান লেগ উইদাউট ইংলিশ।
যাহোক, শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাক বাইটিং করা ঠিক না। শিক্ষা রুষ্ঠ হয়ে অভিশাপ দিলে ব্যাক বাইটিং আমার উপর ব্যাক ফায়ার করতে পারে। ভালো কথা, ব্যাক বাইটিং আর ব্যাক ফায়ার নিয়েও আমার কাছে সৃজনশীল ক্লাশের গল্প আছে। কেউ শুনতে চান? চাইলে শোনাতে পারি। আরেকটি কথা, কম্যুনিকেটিভ মেথডের ইংরেজিতে ইতোপূর্বে আমি জ্যাম সাহিত্য লিখেছি। লিংক দিচ্ছি না; আগ্রহীরা খুঁজে পড়ে নেবেন। ভালো কিছুর জন্য একটু কষ্ট করতেই হয়, নয় কি?
বিশেষ আর কী! হোয়াট স্পেশাল!