বন্ধু মকবুলকে আমরা ফিদা হোসেন নাম দিলাম, সে প্রথমে আপত্তি করলো, বললো, দ্যাখ, নাম বিগলানো ঠিক না! আমরা ওকে বোঝাতে পারিনি এটা নাম বিগলানো না, নামকে একটা জাত দেবার চেষ্টা।
মকবুল পরীক্ষায় এলো না একবার। পরীক্ষার পরে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত কী হইছে? সে বললো, রিভিশন দেয়া শেষ করতে পারিনাই। এরপরেও একবার এক পরীক্ষায় সে অনুপস্থিত দেখে আমরা ধরে নিলাম কাহিনি একই। তবুও পরীক্ষা শেষে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, রিভিশন শেষ করতে পারোস নাই? সে বললো, না, রিভিশন না, রিভিশন দিছি ঠিকমতো। এবার ধারণাগত প্রশ্ন করছে তো, তাই। আমরা জিজ্ঞেস করলাম পরীক্ষার হলে আসোস নাই, প্রশ্ন জানলি কেমনে? সে বললো, প্রশ্ন দুইদিন আগে লিক হইছিল।
মকবুল খুব পড়তো। যা পেত, তা-ই পড়তো। লিফলেট আর দেয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তি ওর প্রিয় ছিল। সে বানান করে করে পড়তো। মাঝেমাঝে আমাদেরকে বলতো, দোস্ত, এটা কী ঠিক লেখছে?
কোনটা?
এইযে ঘোড়ার ন্যায় শক্তিশালী। ঘোড়াই কি সবচেয়ে শক্তিশালী?
মকবুলের জীবনেও প্রেম এলো। সে আমাদের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতো আর আগের দিন প্রেমিকার সাথে কী হয়েছে, সেটা পরেরদিন এসে বলতো। একদিন বললো, ওর মন খারাপ। আমরা জানতে চাইলাম কী হয়েছে। সে বললো, আমার প্রেমিকার ধারণা আমি ওর ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেই। আমরা ইঙ্গিত পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর প্রেমিকা তোরে এই কথা বলছে? সে বললো, না, আমি ওর ডায়রি পড়ে জানছি।
প্রেম বিষয়ে সে একদিন বললো, প্রেমিকার সাথে মন কষাকষি হইছে। আমরা বললাম, কেন? সে বললো, গতকাল ও আমারে ফোন দিয়া ওর বাসায় যেতে বলছে। ওর বাসা খালি ছিল। আমরা চাপা উত্তেজনা মনে নিয়ে নির্লিপ্ত মুখে জিজ্ঞেস করলাম, পরে? কী করলি?
সে বললো, আমিও বলছি, আমার বাসাও খালি। বাসা খালি থাকলেই কী একজনের বাসায় আরেকজনের যেতে হবে?মকবুলের কথা বলে শেষ করা যাবে না, জ্যাম শেষ হয়ে যাবে। মকবুল বন্ধুকে আমরা ভালোবাসি। সৎ এই বন্ধুটির জন্য কয়টি লাইক হবে, ফ্রান্স?