-ব্যাডা, এইডা তুই কুনু কাম করছছ?
-কী করছি! কী করছি!
-আস্তে ব্যাডা, আস্তে! এত চ্যাত কেরে তর?
-চ্যাতের কী আছে! চ্যাতের কী আছে! তর যখন মন-মিজাজ খারাপ, তখন যদি তোর সামনে তোর খারাপ লাগে এমন জিনিস আসে, তাইলে তুই কী করবি! তর মিজাজ আরো খারাপ হবে না? বল, হবে না?
-হ, হইবো। কিন্তু, টিপ দেইক্ষা তর মিজাজ অত খারাপ হইলো ক্যান?
-সারাটা জীবন এই টিপ আমাকে জ্বালাইছে। টিপ শব্দটা শুনলেই আমার মিজাজটা ধরে যায়।
– কিন্ত ক্যান!
-তাইলে শোন, তোকে বলি, স্কুলে পড়তাম সময় আমার হাতের লেখা খারাপ ছিল বলে বাতেন স্যার আমারে বলতো, “তুই খাতাত নাম না লেইক্ষা টিপসই দে। তর টিপসই বুঝা যাইবো, হাতের লেখা না।” হাতের লেখা খারাপ বলে একটা শিশুকে এভাবে লজ্জা দেবে?
-না, দোস্ত, এইটা ঠিক করে নাই। কোমলমতি শিশুদের এমনে বলা ঠিক না।
-শোন, কমল আর মতির হাতের লেখাও খারাপ ছিল, ওদেরকে কিন্তু এভাবে কোনদিন বলেনি। আমাকেই শুধু এইভাবে অপমান করছে।
-কাজটা ঠিক হয় নাই, দোস্ত। শিক্ষকদের এইটা বুঝা উচিত। যাকগা, এই জন্য তুই এত বছর পরে আইসা টিপের পিছে লাগবি?
-আরে ব্যাটা আমার কথা শেষ হইছে? কথা শেষ করতে ত দিবি?
– ক, দোস্ত, ক।
-আমির হামজা স্যারের ব্যাকরণ ক্লাসে পিছনের বেঞ্চে বসে রইসুদ্দিন নষ্ট ফ্যানের সুইচ টিপাটিপি করছিল আর বলছিল, “মরা ব্যাঙে বিদ্যুৎ আসলে, নষ্ট সুইচেও ফ্যান ঘুরবো।” আমি ওর আগের বেঞ্চে ছিলাম। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছি, আর স্যার ভাবছে আমি বুঝি সুইচ টেপার শব্দ করছি। স্যার এসে আমার কান টেনে ধরল, কান টেনে বললো, “পড়া বাদ দিয়া টিপ টিপ খেলো?”
-আহারে!
-তোর মনে আছে, আমাদের ছোটবেলার একটা গান ছিল, ‘টিপ টিপ বরসা পানি’।
-কী কস, এই গান ভুলুম কেম্নে! রাবিনা খালা…
-পাড়ার ক্লাব ঘরে বড় ভাইরা এই গান দেখছিল; আব্বা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে পাইছে ওইখানে। এরপরে যে কী করছে, সেইটা ত তুই আন্দাজ করতে পারছ। আব্বাকে ত তুই চিনছ। আব্বা আমাকে মারে আর বলে, ”আমার পোলা অইয়া তুই টিপ টিপ দেহস!”
-নারে দোস্ত, মনটা খারাপ হইয়া গেল। টিপ নিয়া তর দুঃখের এত ইতিহাস!
-আরে ব্যাটা, শেষ করছি?
-আরো আছে!
-কইতে ত দিবি!
-ক, দোস্ত, ক।
-তখন কলেজে পড়ি। চোখের অঞ্জলি ওঠার সিজন আসলো। যেদিনের ঘটনা, সেদিন আমার বাম চোখটা টাটাচ্ছিল, আমি মুখ একটু বাঁকায়া চোখ বন্ধ-খোলা করছিলাম। ভিপি নুরার বোন মনে করছে আমি বুঝি চোখ টিপ দিছি….
-এহহে!
-শুনতে চাইছছ, শোন। কলেজ পার করে চাকরিতে আসলাম, ট্রেনিংয়ে যোগ দিলাম। সবাই শ্যুটিংয়ে ভালো করলো, আমার খালি টার্গেট মিস হয়ে যায়। ওস্তাদ আমাকে ঝাড়ে আর বলে, “তর হাতের টিপ এত খারাপ ক্যা!”
-উফ্ দোস্ত, আমি আর নিতে পারতেছি না!
-আরো আছে, বলতে দে।
-না, থাক, দোস্ত। আমি বুঝছি তর কষ্ট।
-আর আমারে দোষ দিবি?
-না দোস্ত, টিপের লাইজ্ঞা আর তরে দোষ দিমু না। তয়, পায়ে হোন্ডার চাক্কা দিয়া ধাক্কা দেওয়ার লাইজ্ঞা দিমু।
-এই তো আরো একটা ভুল বললি। আরে ভাই, যে রাস্তায় এই ঘটনা, সে রাস্তায় একটা পিপড়া ঠিক মতো হাঁটতে পারে? আরেকটা পিপড়ার সাথে ধাক্কা লাগে না? সেখানে আমি যদি একটা হোন্ডা নিয়ে যাই, তখন কি একটু ধাক্কা লাগতে পারে না?
– হুমমম…দোস্ত, তুই জিতছছ। খাড়া, বেলডা টিপি, চা দিতে কই।