কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল কে খেয়েছে, সে নিয়ে ব্যাপক জ্বালাময়ী সভা, উত্তেজিত আলোচনা হলো খলায়। দেখা গেলো, শালিক, ঘুঘু- এইসব পাখি নামের কলংকই যে বড় অপরাধী, সেটা সবারই জানা। এর মাঝে কে বেশি অপরাধী: শালিক নাকি ঘুঘু- এটা নির্ধারণ করার জন্য ব্যাপক যুক্তি তর্ক হলো। আলোচনায় উঠে এলো আরেকটা কালপ্রিটের কথা। দেখা গেলো, কৃষকেরা ইঁদুরকে ভুলে যায়নি; বরং তাকে তার প্রাপ্য আসনে বসিয়েছে অনেকেই। বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, সে-ই সবচে’ বড় শত্রু। বীজের বস্তা কাটা, চারা হবার পর জালি কাটা, আর ফসল পাকার পর ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই খেয়ে ফেলা- প্রতি পদে পদে এইসব ধ্বংসাত্মক কাজের ধারাবাহিকতা চালু রেখেছিল সারাটা সময়। ঠিক হলো, সবার আগে ইঁদুর নিধন, তারপর দেখা হবে ঐসব পাখি নামের কলংক। পোকা মাকড় ও অনেক ফসল নষ্ট করে। পোকা মাকড় ছোট বলে একে ছোট করে দেখার কিছু নেই বলে অনেকেই একমত হয়। সিদ্ধান্ত হয় একেও দমন করা হবে কঠোর হস্তে। আলোচনা চলতে পারতো আরো, তবে চলল না। সন্ধ্যা নেমে যেতেই সবাই উসখুস করতে শুরু করল। উঠা দরকার, কাল মহাজনি ট্রাক আসবে। বেচার জন্য ফসল তৈরি রাখতে হবে। টাকা দরকার সবার। এইসব দুশমনদের দমন আলোচনা করা যাবে আরো, প্রয়োজনে আরো সভা করা হবে, তবুও এদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। সামনের বার তো একেবারে শুরুতেই দেখিয়ে দেয়া হবে কত ধানে কত চাল। সবাই সিদ্ধান্ত নেয়। জ্বালাময়ী সভা শেষ হয়। বাড়ির পথ ধরে সবাই ভাবে, যদি ফসলের মূল্যটা একটু বাড়িয়ে পাওয়া যেত, তাহলে সব ক্ষতি পুষিয়ে যেত; খরচ উঠে বছর চলার মত ব্যবস্থা প্রায় হয়েই যেত! কিন্তু মহাজন কেন শালিক ঘুঘু ইঁদুর পোকামাকড়ের করা ক্ষতির ভর্তুকি দেবে?
০৩/০৭/২০১৮ উত্তরা, ঢাকা।